পশ্চিম যখন ‘ওয়ার অন টেরর’ নাম দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের সূচনা করলো, গোটা দুনিয়ার বিলিয়ন বিলিয়ন মুসলিমকে তখন সাথে সাথে ‘ডি-হিউম্যানাইজ’ করে ফেলা হলো। খেয়াল করুন—দুনিয়ার বিলিয়ন বিলিয়ন মুসলিম সাথে সাথে ‘মজলুম’ হয়ে গেছে শুধুমাত্র একটা চিন্তার কারণে, আর সেই চিন্তাটা হলো—ওয়ার অন টেরর।
সেই ওয়ার অন টেররের জামানায় একজন দাঁড়িওয়ালা মুসলিম মানেই সাক্ষাৎ সন্ত্রাসী। নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে দাঁড়িওয়ালা, কাঁধে ঝোলানো একটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মুসলিমকে চারপাশের সকলে সন্দেহের চোখে তাকায়৷ যেন তার ব্যাগের মধ্যে টাইম বোম্ব, আর মাথার মধ্যে ঘুরছে বোম্বিংয়ের আইডিয়া।
কী বিশাল একটা জনগোষ্ঠী, অথচ সামান্য একটা চিন্তার কাছে তারা হয়ে যায় মাজলুম তথা দূর্বল।
অন্যদিকে, যদি আপনি ইভোলিউশন থিওরির কথা চিন্তা করেন, দুনিয়াতে কতো পার্সেন্ট লোক এই থিওরিতে বিশ্বাস করে? দুনিয়ার বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের এই থিওরির প্রতি সন্দেহ আর অবিশ্বাস বিদ্যমান। হোক সেটা তার ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে অথবা র্যাশনাল চিন্তার জায়গা থেকে।
কিন্তু, যদি কোনো সাইন্টিস্ট এই ইভোলিউশন থিওরির বিরুদ্ধে কথা বলে, সাইন্স একাডেমিয়া থেকে তাকে ফায়ার করতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগবে শুধু৷ সে যতোবড়ো ডাকাবুকো আর তালেবর বিজ্ঞানীই হোক—একাডেমিয়াতে তার আর খাওয়া নেই।
এই থিওরিতে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা অনেক কম, কিন্তু তারা ডোমিনেট করে সংখ্যাধিক্য লোকের চিন্তা আর বিশ্বাসের ওপর।
সুতরাং, সবল আর দূর্বলের বিষয়টা সংখ্যা দিয়ে ভাবলে আমরা সঠিক উপসংহারে পৌঁছাতে পারবো না। ক্ষমতা কাঠামো কার পেছনে আছে—সেটাই ঠিক করে দেয় দুনিয়াতে কে সবল আর কে দূর্বল। ক্ষমতা কাঠামো যদি একজনের পেছনে থাকে, তাহলে সেই একজন কখনোই মাজলুম নয়, বরং একশো কোটি মানুষের বিপরীতে সে-ই জালিম।
ক্ষমতা কাঠামো সাবস্ক্রাইব করে চিন্তাকে। ওয়ার অন টেরর যেমন একটা চিন্তা ছিলো, তেমনি রূপান্তরবাদও একটা বৈশ্বিক চিন্তার শাখা। এই চিন্তাকে অনেকে জেনে আবার অনেকে না জেনে সাবস্ক্রাইব করবে এটা খুব সত্য। যারা না জেনে, অজ্ঞতা থেকে সাবস্ক্রাইব করবে তারা যদি অনুতপ্ত হয়, ভুলটা থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে আমরা তাদের দূরে ঠেলে দিবো না। তবে, যারা এই চিন্তা পদ্ধতির এবং এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল জেনেই এর অংশ হবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ বলবৎ থাকবে।
শিরক করার পর কেউ মন থেকে তাওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেন। কিন্তু তাই বলে ‘শিরক’ এর বিরুদ্ধে সংগ্রামকে বন্ধ করে দেওয়া হয় না।