cookie

We use cookies to improve your browsing experience. By clicking «Accept all», you agree to the use of cookies.

avatar

সিরাহ্

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিরাহ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র জীবনী

Show more
Advertising posts
552
Subscribers
No data24 hours
+77 days
+2930 days

Data loading in progress...

Subscriber growth rate

Data loading in progress...

পর্ব ৪৯ মক্কা থেকে সিরিয়া যাওয়ার পথে ছিল অদ্দান নামক উপত্যকা। গিফার গোত্রের অবস্থান এখানেই৷ মক্কা থেকে সিরিয়াগামী বাণিজ্য কাফেলা এই গোত্রকে অর্থ প্রদান করত। বিনিময়ে তারা কাফেলাকে নিরাপত্তা দিত। গিফার গোত্রের মুল পেশা ছিল ডাকাতি, ছিনতাই। যুনদুব ইবনে যুনাদাহ, আবু যর ছিলেন এই গোত্রের সন্তান। ছোট বেলা থেকেই তিনি সাহস, জ্ঞান এবং বিচক্ষণতার জন্য পরিচিত ছিলেন। গোত্রের পেশাই ছিল ডাকাতি, রাহাজানি। স্বাভাবিক ভাবে তার পেশাও সেটাই হয়। তিনি বলেন , আমি জানতে পারলাম যে, মক্কায় এক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন। আমি আমার ভাইকে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কার ঐ লোকটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফিরে আসল। অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি খবর নিয়ে এলে? সে বলল, আল্লাহ্‌র কসম! আমি এমন একজন ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশ দেন এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার খবরে আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। অতঃপর আমি একটি ছড়ি ও এক পাত্র খাবার নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হলাম। মক্কায় পৌঁছে আমার অবস্থা দাঁড়াল এমন যে, আমি তাকে চিনি না এবং কারো নিকট জিজ্ঞেস করাও আমি সমীচীন মনে করি না। তাই আমি যমযমের পানি পান করে মসজিদে হারামে থাকতে লাগলাম। একদিন সন্ধ্যা বেলা আলী (রা:) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে আমার প্রতি ইশারা করে বললেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী।আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে চল। আবূ যর বলেন, অতঃপর আমি তার সাথে তার বাড়ি চললাম। পথে তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করেননি আর আমিও ইচ্ছা করে কোন কিছু বলিনি। তাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোরবেলায় আবার মসজিদে গেলাম ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য। কিন্তু ওখানে এমন কোন লোক ছিল না যে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। তিনি বলেন, ঐদিনও আলী (রা:) আমার নিকট দিয়ে চলার সময় বললেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করতে পারেনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে চল। পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বল, তোমার ব্যাপার কি? কেন এ শহরে এসেছ? আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখার আশ্বাস দেন তাহলে তা আপনাকে বলতে পারি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি গোপন করব। আমি বললাম, আমরা জানতে পেরেছি, এখানে এমন এক লোকের আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করেন। আমি তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার জন্য আমার ভাইকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে ফেরত গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কোন কিছু বলতে পারেনি। তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আগমন করেছি।
Show all...
পর্ব ৪৮ আমর ইবনু আবাসাহ আস-সুলামী (রাঃ) বলেছেন, আমি জাহিলী যুগে ধারণা করতাম যে, সব লোকই পথভ্রষ্ট ও তাদের কোন ধর্ম নেই। তারা দেব-দেবীর পূজা করত। এ অবস্থায় আমি শুনতে পেলাম যে, মাক্কায় জনৈক ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করেছেন। আমি আমার বাহনে উপবিষ্ট হয়ে তাঁর নিকট এসে দেখলাম যে, তিনি নিজেকে জনসমাগম থেকে সরিয়ে রাখেন, তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে অত্যাচার-নির্যাতন করে। আমি কৌশলে মাক্কায় তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি তাঁকে বললাম, আপনি কে? তিনি বলেন, আমি একজন নবী। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম, তিনি আপনাকে কোন জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন, তিনি আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে, মূর্তিসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে, আল্লাহ এক বলে ঘোষণা করতে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক না করতে পাঠিয়েছেন। আমি তাঁকে বললাম, এ ব্যাপারে আপনার সাথে কারা আছে? তিনি বলেন, স্বাধীন ও দাসেরা। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী হ’তে চাই। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তুমি তাতে সক্ষম হবে না। তুমি কি আমার অবস্থা এবং (ঈমান আনয়নকারী) অন্যদের অবস্থা দেখছ না? বরং তুমি তোমার পরিবারে ফিরে যাও, যখন তুমি শুনতে পাবে যে, আমি বিজয়ী হয়েছি তখন আমার নিকট এসো। বর্ণনাকারী বলেন, তাই আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে এলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলেন, আমি তখন আমার পরিবারের সাথে ছিলাম। তিনি মদীনায় আসার পর থেকে আমি খবরাখবর নিতে থাকলাম এবং লোকজনের নিকট জিজ্ঞেস করতে থাকলাম। শেষে আমার নিকট ইয়াছরিব-এর একদল লোক অর্থাৎ একদল মদীনাবাসী এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, যে ব্যক্তি মাদীনায় এসেছেন তিনি কি করেন? তারা বলেন, লোকজন অতি দ্রুত তাঁর অনুসারী হচ্ছে, অথচ তাঁর জাতি তাঁকে হত্যা করতে বদ্ধ পরিকর, কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হয়নি। অতএব আমি মদীনায় এসে তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তুমি তো মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ।  যিনি একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা ছিলেন । তিনি প্রখ্যাত সাহাবা আবু যার আল গিফারি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র বৈপিত্রীয় ভাই ছিলেন । তিনি সিরিয়ায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর কবর সেখানেই আছে।
Show all...
পর্ব ৪৭ অনেক ঐতিহাসিকের তথ্য অনুযায়ী তিনি  ইসলাম গ্রহণ কারী চর্তুথ ব্যক্তি।  কুরাইশের বনু উমাইয়া গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন।  তাঁর নাম খালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে আ'স। একরাতে স্বপ্ন দেখেন তিনি এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোমড় জড়িয়ে ধরে সেখান থেকে টেনে নিয়ে আসেন। এই স্বপ্ন দেখে ভয়ে জেগে উঠেন।  এই স্বপ্ন নিয়ে আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র সাথে কথা বলেন। আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সব শুনে বলেন, আল্লাহ খালিদের কল্যাণ চাচ্ছেন। আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরও বলেন, মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ'র রাসুল। তুমি আচিরেই ইসলামে দীক্ষিত হবে এবং  তাঁর অনুসারী হবে। ইসলাম তোমাকে আগুন থেকে রক্ষা করবে।  তোমার পিতা তো আগুনে প্রায় পড়েই গেছে।  ( তাঁর পিতা তখনও জীবিত এবং কাফের)। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করে জিজ্ঞেস করেন,  " ইয়া রাসুলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)  আপনি কিসের দাওয়াত দেন?" রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দেন " আমি তোমাকে আল্লাহ'র দিকে আহবান করছি। যিনি এক এবং অদ্বিতীয়।  তুমি যে পাথরের তৈরী প্রতিমার পূজা কর তা ছেড়ে দাও৷ তা কিছু শুনতে অক্ষম, কোন কিছু দেখতে অক্ষম,  কারও কোন ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না।  সে জানে না কে তার পূজা করে,  কে করে না। " খালিদ সাথেই শাহাদাত আর রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।  এরপর বিষয়টা গোপন রাখেন। যেহেতু তখনও ইসলামের দাওয়াত প্রকাশ্যে দেয়া হচ্ছিল না।  পরে তাঁর পিতা যখন জানতে পারেন তখন খালিদকে প্রচন্ড মারধর করে এবং  মাথা ফাটিয়ে দেন। পিতা খালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, আমি তোমার খাওয়া বন্ধ করে দিব "। খালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন,  আপনি আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলেও আল্লাহ আমাকে রিযিক দিবেন। " রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনে সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে অনেক পছন্দ করতেন। তিনি ৩ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন আবিসিনিয়ায় হিজরতের সময় তিনি স্ত্রী সহ হিজরত করেন৷ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মে হাবিবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা'র বিয়েতে খালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উম্মে হাবিবা'র ওয়ালি ছিলেন। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র খিলাফতের সময় তাঁর নেতৃত্বে অনেক জিহাদ পরিচালিত হয়। ১৩ হিজরি, ৬৩৪ ইংরেজি সাল হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র খিলাফত চলছে। এই বছর তিনি উম্মে হাকিম বিনতে হারিসকে বিয়ে করেন। সেদিনই জিহাদের ডাক আসে৷ সিরিয়াকে রোমান দখল মুক্ত করে তাওহীদের পতাকা উত্তোলিত হয় সে জিহাদে৷ এই জিহাদ " মার্জ ই সাফার এর যুদ্ধ" নামে পরিচিত। মার্জ ই সাফার সিরিয়ার একটা এলাকার নাম। এই যুদ্ধে তিনি শহীদ হন৷ যেদিন বিয়ে করেন সেদিনই শহীদ হন৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই মহান সাহাবী সম্পর্কে খুব একটা আলোচনা ঐতিহাসিকরা করেন নি। বেশিরভাগ মানুষের কাছে অপরিচিতই থেকে যান তিনি।
Show all...
পর্ব ৪৬ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ সেই সময় কথা একজন কিশোর মাত্র, তখনও যৌবনে পদার্পণ করেননি। কুরাইশ গোত্রের এক সর্দার ’উকবা ইবন আবু মু’ইতের একপাল ছাগল নিয়ে তিনি মক্কার গিরিপথগুলোতে চরিয়ে বেড়াতেন। একদিন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ দেখতে পেলেন, দু’জন বয়স্ক লোক, যাদের চেহারায় আত্মমর্যাদার ছাপ বিরাজমান, দূর থেকে তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছেন। তাঁরা ছিলেন এত পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত যে, তাঁদের ঠোঁট ও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। নিকটে এসে লোক দু’টি সালাম জানিয়ে বললেন, ‘বৎস! এ ছাগলগুলি থেকে কিছু দুধ দুইয়ে আমাদেরকে দাও। আমরা পান করে পিপাসা নিবৃত্ত করি এবং আমাদের শুকনা গলা একটু ভিজিয়ে নেই।’ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বললঃ ‘এ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। ছাগলগুলি তো আমার নয। আমি এগুলির রাখাল ও আমানতদার মাত্র।’ লোক দু’টি তার কথায় অসন্তুষ্ট হলেন না, বরং তাদের মুখ মণ্ডলে এক উৎফুল্লতার ছাপ ফুটে উঠলো। তাদের একজন আবার বললেনঃ ‘তাহলে এমন একটি ছাগী আমাকে দাও যা এখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি।’ ছেলেটি নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট ছাগীর দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন। লোকটি এগিয়ে গিয়ে ছাগীটি ধরে ফেলেন এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম’ বলে হাত দিয়ে ধরে তার ওলান মলতে লাগলেন। অবাক বিস্ময়ে ছেলেটি এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বললেনঃ ‘কখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি এমন ছোট ছাগী কি দুধ দেয়? কিন্তু কি আশ্চর্য! কিছুক্ষনের মধ্যেই ছাগীর ওলানটি ফুলে ওঠে এবং প্রচুর পরিমাণ দুধ বের হতে থাকে। দ্বিতীয় লোকটি গর্তবিশিষ্ট পাথর উঠিয়ে নিয়ে বাঁটের নীচে ধরে তাতে দুধ ভর্তি করেন। তারপর তাঁরা উভয়ে পান করেন এবং ছেলেটিকেও তাদের সাথে পান করালেন। ইবন মাসউদ বলেনঃ আমি যা দেখছিলাম তা সবই আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। আমরা সবাই যখন পরিতৃপ্ত হলাম তখন সেই পূণ্যবান লোকটি ছাগীর ওলানটি লক্ষ্য করে বললেনঃ ‘চুপসে যাও।’ আর অমনি সেটি পূর্বের ন্যায় চুপসে গেল। তারপর আমি সেই পূণ্যবান লেকটিকে অনুরোধ করলামঃ ‘আপনি যে কথাগুলি উচ্চারণ করলেন, তা আমাকে শিখিয়ে দিন।’ বললেন, ‘তুমি তো শিক্ষাপ্রাপ্ত বালক।’ ইসলামের সাথে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের পরিচিতির এটাই হলো প্রথম কাহিনী। এ মহাপূণ্যবান ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তাঁর সংগীটি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.। এরপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হিজরতের প্রায় ২৮ বছর পূর্বে ৫৯৪ সালে মক্কার তামিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) নিজেই বলতেন, ‘আমি ষষ্ঠ মুসলিম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।’ মুসনাদে আহমাদ, রাসূল (সা.) ঘুমালে তাঁকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন, গোসলের সময় পর্দা দিতেন। মিসওয়াক বহন করতেন। তিনি যখন হুজরায় অবস্থান করতেন তখনো তার কাছে যাতায়াত করতেন। রাসূল (সা.) তাকে যখনই ইচ্ছা তাঁর কামরায় প্রবেশ এবং কোনো ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংকোচ না করে তার সব বিষয় অবগত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এবং তার পারিবারিক আলোচনায় বসারও অনুমতি দিতেন। এ কারণে তাঁকে ‘সাহিবুস সির’ বলা হয়। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, আমরা মদিনায় এসে ইবনে মাসউদকে রাসূল (সা.)-এর পরিবারের সদস্য হিসাবেই মনে করতাম। কেননা রাসূল (সা.)-এর কাছে তার ও তার মায়ের অধিক পরিমাণে যাওয়া-আসা ছিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮০৬)। একদিন কা'বার মাকামে ইবরাহিমের কাছে দাঁড়িয়ে উচচরবে সুরা আর রহমানের কিছু অংশ তিলাওয়াত করেন। কুরাইশ নেতারা তা শুনে হতবাক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারা তাঁর দিকে ছুটে গিয়ে নির্দয়ভাবে তাঁর মুখে আঘাত করতে থাকে। নির্যাতনের পরও তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর শত্রুরা আমার কাছে খুবই তুচ্ছ। আমি আবারও গিয়ে তাদের সামনে কোরআন তিলাওয়াত করব। তিনিই প্রথম মুসলমান যিনি প্রকাশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করেছিলেন। তিনি ৮৪৮টি হাদিস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে বুখারী ও মুসলিমে ৬৮, এককভাবে বুখারীতে ২১ আর মুসলিমে ৩৫টি হাদীস লিপিবদ্ধ হয়েছে তাঁকে হযরত ওমর (রা) কুফার শিক্ষক নিযুক্ত করেন । হযরত ওসমান (রা)-এর সময় তিনি কুফার প্রধান বিচারপতি ও বায়তুল মালের তত্ত্বাবধায়ক পদে বহাল ছিলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস'উদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বদর যুদ্ধের সম্মানিত সাহাবি৷ পরবর্তীতে জিহাদ গুলোতেও তিনি অংশ গ্রহণ করেন। ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।
Show all...
পর্ব ৪৫ আফিফ আল কিন্দি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাসের ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বন্ধু। তারা দুইজন আবার বিজনেস পার্টনারও ছিলেন। তার সম্পর্কে ইতিহাসে তথ্য বলতে গেলে না-ই। তিনি মক্কা বা ইয়েমেন বা আরবের অন্য কোন অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন৷ তার ঠিকানা সম্পর্কেও ইতিহাস নিরব। তিনি হজ্জের মৌসুমে একদিন মিনায় আব্বাসের সাথে ছিলেন। হঠাৎ একটা তাঁবু থেকে এক ব্যক্তি বেরিয়ে সূর্যের অবস্থান দেখল এরপর পানি দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হাত - মুখ - পা ধৌত করল এবং মাথা মাসেহ করল। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে কিছু একটা শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা ছেলে এসে একই নিয়মে হাত মুখ পা ধৌত করে মাথা মাসেহ করে ওই ব্যক্তির ডান পাশে দাঁড়িয়ে গেল। এবং একই রকম কাক করতে থাকলেন৷ এরপর একজন মহিলা এসেও একই ভাবে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে সবার পিছনে দাঁড়িয়ে গেল। প্রথমে ওই ব্যক্তি হাটুতে হাত রেখে ঝুঁকলেন। সাথে সাথে ওই দুজনও একই কাজ করলেন।এরপর সেই ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। ওরা দুইজনও সোজা হয়ে দাঁড়ালো।এরপর সেই ব্যক্তি মাটিতে মাথা ঠেকালো। এরা দুইজনও একই রকম করল। এই সিস্টেমে পরিচ্ছন্ন হওয়া এবং এরপর তারা যা করছিলেন সেই কাজ আফিফ জীবনে কোনদিন দেখেন নাই। তিনি আব্বাসকে জিগ্যেস করলেন, বন্ধু এটা কি? এ-কি কোন ধর্মীয় আচার? আমি তো বুঝতে পারছি না কিছুই। আব্বাস ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) উত্তর দিলেন এই ব্যক্তি হচ্ছেন আমার ভাই আবদুল্লাহ'র পুত্র মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) । তার দাবি আল্লাহ তাকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন। সে দাবি করে এই মহাবিশ্বের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ। সে দাবি করে পারস্য এবং রোম একসময় সে এবং তার অনুসারীরা বিজয় করবে। ( পারস্য এবং রোম তখনকার দুনিয়ার সুপারপাওয়ার। এখনকার সময়ে যেমন আমেরিকা, চীন,রাশিয়া, বৃটেন। পারস্য এবং রোম যে বিজয় করবে সে হবে নতুন সুপারপাওয়ার। তাও যদি মরুভূমির দরিদ্র বেদুইন জাতির কেউ এমন দাবি করে তো চমৎকৃত হওয়াই স্বাভাবিক) । মহিলাটি হচ্ছে মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রী৷, খুলাইলিদের কণ্য। আর ছেলেটা হচ্ছে আমার আরেক ভাই আবু তালিবের পুত্র আলী, । আব্বাস আরও বলেন, এই নতুন দ্বীনের অনুসারী দুনিয়ায় এরা তিনজনই। আফিফ আল কিন্দি পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। কখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বা কার হাতে করেছিলেন এ ব্যপারে তথ্য পাওয়া যায় নি।।তবে যে তথ্য পাওয়া যায় সেটা হলো, তিনি পরবর্তী জীবনে আফসোস করেছিলেন, কেন সেদিই ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। তাহলে চর্তুথ ইসলাম গ্রহণকারী হতে পারতেন। মুসলিম হিসেবে তাঁর জীবন এবং মৃত্যু সম্পর্কে আর কোন কিছু আমরা জানতে পারিনি।
Show all...
পর্ব ৪৫ হযরত সা'দ বলেন,আমি খবর পেয়েছিলাম ( আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে) মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নতুন দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছেন। ইসলাম গ্রহণের তিন রাত আগে আমি ঘোর অন্ধকারের মধ্যে আছি। অন্ধকারে কারণে কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না।হঠাৎ আলোর বিচ্ছুরণ ঘটল। আমি তা অনুসরণ করে চললাম। দেখলাম আলী, যায়দ, আবু বকর আমার অনেক আগে চলে গিয়েছেন। আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইসলামের দাওয়াত পাওয়া এবং তারপর এই স্বপ্ন দেখে হযরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করেন। জিগ্যেস করেন, আপনি কিসের দাওয়াত দেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি সাক্ষ্য দিই আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি আল্লাহ'র রাসুল। হযরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাথে সাথে তাওহীদ এবং রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়ে মুসলিম হয়ে যান। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ছিলেন কুরাইশ বংশের 'বনু যুহরা' গোত্রের সন্তান। ৫৯১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা-বাবা দুজনই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ প্রিয় সাহাবির নাম ছিল 'সাদ', উপনাম 'আবু ইসহাক', বাবার নাম 'আবু ওয়াক্কাস' আর মায়ের নাম 'হামনা'। তিনি ইতিহাসে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস নামেই খ্যাত। হজরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু -এর সঙ্গে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের ছিল গভীর বন্ধুত্ব। তাই ইসলামের সূচনালগ্নে আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু -এর প্রেরণায় তিনি ও তাঁর ভাই উমাইর ইসলাম গ্রহণ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনি ১৭ তম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেতৃত্বে পরিচালিত প্রায় সব যুদ্ধেই হজরত সাদ অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরে হজরত সাদ ও তাঁর ভাই হজরত উমাইর (রা.) বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। এ যুদ্ধে উমাইর (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। উহুদ যুদ্ধে যে কয়েকজন সাহাবি নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন রক্ষার্থে বূ্যহ রচনা করেছিলেন, হজরত সাদ ছিলেন তাঁদেরই একজন। সেদিনকার ঘটনা বুখারি শরিফের এক হাদিসে হজরত সাদ (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন তাঁর সমর্থনে পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াত নাজিল হয়েছে। বদর যুদ্ধে হজরত সাদ সাঈদ ইবনে আসকে হত্যা করে তার তলোয়ারটি রাসুল (সা.)-এর কাছে জমা দিয়ে সেটি তাঁকে দিয়ে দিতে আবেদন করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেটি তাঁকে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, এটি না তোমার, না আমার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জবাব শুনে হজরত সাদ কিছুদূর যেতে না-যেতেই সুরা আনফাল নাজিল হয়। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকে ডেকে বলেন, 'তোমার তলোয়ারটি নিয়ে যাও।' হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন. 'একমাত্র সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মাতা-পিতা উৎসর্গ বলে তাঁর সম্পর্কে উক্তি করেছেন। অন্য কারো সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ রকম উক্তি করতে আমি শুনিনি।' রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় হজরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর অনুপস্থিতিতে হজরত সাদ তিনবার আজান দিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, 'আমার সঙ্গে বেলালকে না দেখলে তুমি আজান দেবে।' হজরত সাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মধ্যে কাব্যপ্রতিভাও ছিল। ৬৪৬ ও ৬৫১ সালে তাকে কূটনৈতিক দায়িত্ব দিয়ে চীন পাঠানো হয়। একবার সা’দ মোজার ওপর মসেহ সংক্রান্ত একটি হাদীস বর্ণনা করেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার তাঁর পিতা হযরত উমার ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীসটির সত্যতা যাচাই করতে চাইলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হাদীসটি কি সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাস থেকে শুনেছ? বললেনঃ ‘হাঁ। উমার বললেনঃ হাঁ সা’দ যখন তোমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করে, তখন সে সম্পর্কে অন্য কারো নিকট কিছু জিজ্ঞেস করবে না।’ সাদ ছিলেন সৎসাহসী, সত্যবাদী, বীরপুরুষ, অভিজাত কোরাইশ বংশীয় একজন সম্মানিত ব্যক্তি। ইসলামের প্রথম যুগে তিনি মুসলমান হয়েছিলেন। হযরত সা’দের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ‘আশারায়ে মুবাশ্শারাহ’ অর্থাৎ জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজনের অন্যতম. সাদ যখন মৃত্যুশয্যায়, তিনি নিজের ব্যবহৃত পুরোনো পশমি জুব্বাটি আনতে বললেন। তারপর ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে মনের দৃঢ় বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে বললেন, ‘এই জুব্বাটি পরে আমি বদর যুদ্ধে মুশরিকদের মোকাবিলা করেছিলাম। এটি আমার কাফনের কাজে ব্যবহার করবে। এ জন্যই এটি এতদিন পর্যন্ত যতœ করে রেখেছিলাম।’
Show all...
তার ছেলে মুসয়াব বলেন, বাবার মৃত্যুশয্যায় তার মাথা আমার কোলে ছিল। তার অবস্থা দেখে আমি কাঁদতে লাগলাম। তিনি মাথা তুলে বললেন, ‘বেটা, তুমি কাঁদছ কেন?’ বললাম, আপনার অবস্থা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না, তাই কাঁদছি। তিনি বললেন, কেঁদো না। কারণ, আল্লাহ তায়ালা আমাকে আজাব দেবেন না। অবশ্যই আমি জান্নাতে যাব। ৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৫৫ হিজরিতে তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন।মুহাজিরদের মধ্যে তার মৃত্যু সবার পরে হয়েছে। আশারায়ে মুবাশ্শারাহ’ র সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
Show all...
পর্ব ৪৪ হযরত তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বসরার এক বাজারে গিয়েছিলেন । বসরায় এক পাদ্রীকে দেখলেন ,এক পাদ্রী তার গীর্জার ভিতর থেকে বলতেছেন ,বাজারের লোকদের জিজ্ঞাসা কর,তাদের মধ্যে মক্কার কোন অধিবাসী আছে কিনা?তালহা (রাঃ) বলেন, হাঁ আমি আছি।পাদ্রী বললেন, আহমাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর আবির্ভাব হয়েছে?তালহা জিজ্ঞাসা করলেন ,আহমাদ কে?পাদ্রী বলিলেন,ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব।এই মাসেই তাঁর আবির্ভাব হওয়ার কথা।মক্কা হতেই তিনি প্রকাশ হবেন।তিনি পাথর ও খেঁজুর ঘেরা যমীনের দিকে হিজরত করবেন।তুমি যেন তাঁর অনুসরণে করতে পেছনে থেকে না যাও। এই কথা তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে প্রভাবিত করে। মনের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। যার কথা পাদ্রী বলল, তিনি কে? কিভাবে তার অনুসরণ করতে হবে? কেন করতে হবে? তার অনুসরণে বেনিফিট কি? নানান চিন্তা, প্রশ্ন। তিনি দ্রুত মক্কায় চলে আসেন। এসে খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন এ ধরনের কিছু হয়েছে কিনা বা এ ব্যাপারে কেউ কিছু জানে কিনা। ইসলাম তখনও গোপনে প্রচার হচ্ছিল৷ ১০ জনও তখন মুসলিম হয় নাই। স্বাভাবিক ভাবে হযরত তালহা বিষয়টা সম্পর্কে জানতে পারছিলেন না। হঠাৎ তিনি জানতে পারলেন আবু কুহাফার পুত্র আবু বকর নতুন দ্বীন গ্রহণ করেছেন। তিনি আবু বকরের কাছে গেলেন। সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এই ব্যক্তির অনুসারী হয়েছেন?আবূ বকর (রাঃ) বলেন,হাঁ। কারণ তিনি সত্যের পথে আহবান করেন।তালহা(রাঃ) তখন সেই পাদ্রীর কথা খুলে বললেন। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দেরি না করে তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ইসলামের দাওয়াত দেন। হযরত তালহা এ কয়দিনে অজ্ঞাত নতুন দ্বীনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন৷ তিনি আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র দাওয়াতে পজেটিভ এটিচিউড দেখান। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তালহা সহ আরও কয়েকজন কে নিয়ে ( যাদের আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাওয়াত দিয়েছিলেন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হন। এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। কোন বর্ণনায় তালহা ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র কাছেই। পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করেন। ইসলামের সকল সমর অভিযানে অংশগ্রহন করেছিলেন।সমূহ ঝুঁকি নিয়ে উহুদ প্রান্তরে রাসুলের সাথে অবিচল ছিলেন।জীবনবাজির শপথ নিয়েছিলেন।নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রক্ষা করেছিলেন।নিজের হাত দিয়ে নবীজির দিকে নিক্ষিপ্ত তীরাঘাত প্রতিরোধ করতে করতে অবশেষে তা অবশ হয়ে যায়। মৃত্যু পর্যন্ত হাতখানি সে অবস্থায়ই ছিলো।কেউ তাঁর হাতের কথা আলোচনা করলে আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) বলতেন,সে দিনটির সমগ্রই ছিল তালহা(রাঃ) এর জন্য। শেষতক নবীজিকে নিজে পিঠে তুলে সুরক্ষার কৃতিত্ব দেখান। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত:তিনি বলেন,একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ(রাঃ)-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন,যদি কেউ এমন কোনো লোককে জমিনের উপর চলাফেরা করতে দেখতে চায়,যে তাঁর মৃত্যু-প্রতিজ্ঞাপূর্ণ করেছে,সে যেনো এই লোকটির দিকে চেয়ে দেখে। অপর এক বর্ণনায় আছে,যদি কেউ এমন শহীদকে দেখতে চায়,যে জমিনের উপর বিচরণ করছে সে যেন ত্বলহাহ ইবনু উবায়দুল্লাহ(রাঃ)-কে দেখে নেয়।(তিরমিজি,ইবনু মাজাহ) কাইস ইবনু আবূ হাযিম(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,আমি তালহা (রাঃ)-এর ঐ হাতকে অবশ অবস্থায় দেখেছি,যে হাত দিয়ো(উহুদ যুদ্ধে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রক্ষা করেছিলেন। (সহিহ বুখারী) জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী কেরামের তিনি অন্যতম। উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র শাহাদাতের পরে পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য ছয় সদস্যের শূরা কমিটির তিনি একজন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের সময় যেসব সাহাবা কেরামের প্রতি বিশেষভাবে সন্তুষ্ট ছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের একজন।আরব প্রাজ্ঞ নেতাদের একজন।ঢোলের গুঞ্জনের চেয়ে তাঁর অন্তরে ঈমানের আওয়াজ ছিলো অনেক বজ্রময়ী ও বজ্রগম্ভীর।তাঁর বজ্রকণ্ঠে ছিলো বিশ্বাস ও তাওহীদের কথা।ধনৈশ্বর্যের প্রাচর্য আর নিজ গোত্রের সুসংহত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর ভূমিকা নিয়েছিলেন নির্যাতিত লোকদের সারিতে থেকে।
Show all...
পর্ব ৪৩ হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র খালা ছিলেন গণক৷ একদিন তিনি হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দেখে ইংগিতপূর্ণ কিছু কথা বলেন৷ যার অর্থ হযরত উসমান কিছুই বুঝেন নাই৷ খালা আরও বলেন, সেই নবী এসেছেন৷ আল্লাহ'র কালাম এবং তিনি সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী তাঁর সাথে রয়েছে ৷ তুমি তাঁর অনুসরণ কর৷ মূর্তি পুজার বিভ্রান্তি যেন তোমাকে স্পর্শ না করে। " হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ জাতীয় কথা তো তিনি শুনেন নাই কখনও। খালা তখন আরও পরিস্কার করে বলেন "আবদুল্লাহ'র পুত্র মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ'র পক্ষ থেকে রিসালাত পেয়েছেন। তাঁর দ্বীন সফলকাম৷ কারও বিরোধিতা, তরবারি, বর্শা তাঁকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না৷ " তবে খালার কথা গুলো তাঁর মনে দাগ কেটে গেল৷ যদিও তিনি কিছুই বুঝেন নাই৷ হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র সাথে ছিল তাঁর বন্ধুত্ব৷ তিনি পেরেশান অবস্থায় আবু বকরের কাছে গেলেন৷ আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জানতে চাইলেন কি হয়েছে৷ হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সবকিছু খুলে বললেন। আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে উসমান তুমি একজন বুদ্ধিমান মানুষ। সত্য মিথ্যা বুঝার মতো জ্ঞান তোমার আছে৷ তুমি বল, এসব মূর্তি গুলো কি কোন উপকার করার ক্ষমতা রাখে? এরা কি কিছু শুনে বা বুঝে? অথচ আমাদের কওম এদের উপসনায় লিপ্ত৷ হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র সাথে একমত পোষণ করলেন। তখন আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন,তোমার খালা সঠিক কথাই বলেছেন৷ মুহাম্মদ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ'র রাসুল। তিনি সত্যের পথে ডাকছেন। তিনি আল্লাহ'র দ্বীন প্রচার করছেন৷ তুমি যদি চাই তার কথা শুনতে পার। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাজি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করতে৷ এই সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উঠে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুব নম্র এবং মৃদু আওয়াজে ডাকলেন। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যদিও মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বন্ধু ছিলেন কিন্তু রিসালাত ঘোষণার পরে থেকে তিনি বন্ধু নয় বরং সম্মানের সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আচরণ করতেন। তাঁর এই রীতি অন্যান্য সাহাবীরাও অনুসরণ করতেন৷ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আদব রক্ষার ব্যপারে কুরআনেই তাগিদ হয়েছে । হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু'র ব্যপারে বললেন৷ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসে উসমানের দিকে ফিরে বললেন " হে উসমান। আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা'য়ালা জান্নাতের দিকে ডাকছেন। তুমি সে ডাকে সাড়া দাও৷ আর আমি আল্লাহ'র রাসুল৷ তোমার প্রতি এবং সমগ্র সৃষ্টির প্রতি আমাকে পাঠানো হয়েছে"। হযরত উসমান বলেছেন, এই কথা শোনার পরে তিনি নিজের উপর সব কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেন। সাথে সাথেই তিনি তাওহীদ এবং রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়ে ইসলাম কবুল করেন। এর কিছুদিন পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্য হযরত রুকাইয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে তিনি বিয়ে করেন।
Show all...
পর্ব ৪২ যায়দের পিতা এবং চাচা মক্কায় এসে মানুষের কাছ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঠিকানা জেনে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন৷  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তারা বললেন,  " হে আব্দুল মুত্তালিবের পৌত্র। হাশিমের পৌত্র।  আপনারা মহান কাবার প্রতিবেশী৷ আপনাএয়া অসহায়কে সাহায্য করেন। বন্দীকে মুক্ত করেন। আমরা আমাদের সন্তানের ব্যপারে আপনার কাছে এসেছি। " তারা মুক্তিপণ হিসেবে কিছু সম্পদ এনেছিলেন।  সেগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নিবেদন করে বললেন,  এই মুক্তিপণের বিনিময়ে যেন তাদের সন্তানকে মুক্ত করে দেয়া হয়,  তাদের সাথে যেতে দেয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন তাদের সন্তান কে।  বা তারা কার কথা বলছেন।   তারা বললেন,  যায়দ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দের পিতা - চাচাকে জানিয়ে দিলেন,  মুক্তিপণ দরকার নাই।  যায়দ যদি তাদের সাথে যেতে চায় তো তারা নিয়ে যাক৷ আর যদি যায়দ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকতে চাহ তো সেটাও পারবে।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোন জবরদস্তি করবেন না।  যায়দ যা চায় তাই হবে।  তারহ পিতা এবং চাচা তো খুশি হয়ে গেলেন। তারা বললেন,  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা যথার্থই সুন্দর সিদ্ধান্ত।  যায়দকে ডাকা হলো। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো আগত ব্যক্তিদের তিনি চিনেন কিনা। যায়দ উত্তর দিলেন এরা তারা বাবা এবং চাচা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আমার ব্যপারে অবগত আছ এবং আমার সংস্পর্শে আছ। এখন তোমার ইচ্ছে যদি আমার সাথে থাকতে চাও তো আমার কাছে থাকতে পার অথবা  তাদের সাথে যেতে পার।  যায়দ উত্তর দিলেন, আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে অবলম্বন করতে পারব না। আপনিই আমার বাবা  এবং চাচা।  তার পিতা / চাচা তাকে ধিক্কার দিয়ে বললেন, তোমার পরিবার, আত্নীয় স্বজনের উপর গোলামীকে গুরুত্ব দিচ্ছ! যায়দ বললেন, এই মহান ব্যক্তির মধ্যে আমি এমন কিছু দেখেছি, তাঁকে আমি কখনও ছেড়ে যেতে পারব না।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দের হাত ধরে কুরাইশদের এক মিটিং  এ চলে গেলেন।  কুরাইশ নেতৃবৃন্দ সেখানে ছিলেন।  তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,  আজ থেকে যায়দ আমার পুত্র৷ তোমরা সাক্ষী থাক।আমরা পরস্পরের উত্তরাধিকারী।  যায়দের পিতা - চাচা এসব দেখে শুনে খুবই আনন্দিত হলেন।  তারা খুশিমনে বাড়ি ফিরে গেলেন। এইদিন থেকে যায়দ বিন হারিসার পরিবর্তে যায়দ বিন মুহাম্মদ ডাকা হতে লাগল।  যায়দ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছেই থেকে যান। নবুয়ত প্রাপ্তির পরে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন তিনি ঐতিহাসিকদের অনেকেই মনে করেন, হযরত আলী, খাদিজার পরেই যায়দ ঈমান আনেন।   সুরা আহযাব নাযিলের পরে তাকে আবার যায়দ বিন হারিসা নামেই ডাকা হয়। কারণ আল্লাহ সুরা আহযাবে পালিত সন্তানের ধারণাকে নস্যাৎ করে দেন। শরীয়তে পালিত সন্তান বলে কিছু নাই৷
Show all...