বিষয় সম্পর্কের খোঁজ পেয়েছি। যেগুলো এক সূত্রে গাঁথলে হয়তো পুরো চিত্রটা পরিষ্কার বোঝা যাবে।
ক) তার উস্তাদ ছিল গুগল এবং পিডিএফ। কোনো আলিমের সোহবতে সে সাধারণত যেত না। এটা একটা বড়ো ফিতনা। কিতাব আর ইন্টারনেট ইলম অর্জনে সহযোগী হতে পারে। কিন্তু উস্তাদ হতে পারে না। আমাদের সালাফ, আমাদের ইমামরা কিতাবকে উস্তাদ বানাতে বারবার নিষেধ করে গেছেন। ইমাম আহমাদের উস্তাদ ইমাম শাফিঈ রহ. তো কড়া ভাষায় বলেছেন, "কিতাবের পাতা থেকে যারা ফিকহ শিখে, তারা শরিয়তের আহকামগুলোকে নষ্ট করে ফেলে"। (২)
ইমাম শাফেয়ীর বক্তব্য যে কতটা বাস্তব, তা আমি পলাশের মধ্যে দেখেছি। এমন হাস্যকর মতামত সে দিত, ভাবলে অবাক লাগে। একবার সে আমায় বলল, আগের যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না, সেজন্য জি/হা/দের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া হত। এখন যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, স্যোশাল মিডিয়া সহ নানান মাধ্যমে কোনো অঞ্চলে সশরীরে না পৌঁছেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো যায়, সেজন্য এখন আর জি/হা/দের প্রয়োজন নেই। পলাশের ইলমি হালাত এরকম বেহাল ছিল।
খ) পলাশ আরবি পড়তে পারত না। অথচ দ্বীনের জটিল সব বিষয়ে ইলমি আলাপের পাশাপাশি নাস্তিক-মুশরিক-আহলে কিতাবদের খণ্ডন করার চেষ্টা করত। যে আরবি পারে না, যার দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান নেই, যার উস্তাদ গুগল এবং কিতাব, সে যখন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ময়দানে নেমে যায়, তখন তার কী অবস্থা হয় সেটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল পলাশ। সে হিন্দু দর্শন এবং ইসলামের তুলনামূলক আলোচনা করত, নাস্তিক্যবাদের জবাব দিত, আহলে কিতাবদের রদ করত, মাযহাব মানা না মানা বিষয়ে আলোচনা করত, সিফাতের সূক্ষ্ম মাসয়ালা নিয়ে লেখালেখি করত। ইলম অর্জনের আগেই যে এতগুলো বিপজ্জনক ময়দানে নেমে যায়, ঈমান আনার পরেও কুফরের গর্তে তার হারিয়ে যাওয়া তখন আর অস্বাভাবিক মনে হয় না।
গ) পলাশের আদব ছিল না। ভিন্ন মতের আলিম কিংবা সাধারণ মুসলিমের প্রতি সে সম্মান দেখাত না। সবার দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াত। তাচ্ছিল্য করত। নিজস্ব ঘরানার আলিমদের প্রতিও ওকে কখনও তেমন শ্রদ্ধাশীল পাইনি। এটা অনেক বড়ো একটা সমস্যা। আলিমদের যারা শ্রদ্ধা করে না, যারা সবসময় অন্যের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায়, তাদের দ্বীন সন্দেহজনক।
তাছাড়া একজন মুমিন দ্বীনের প্রতি যতটা আবেগী থাকে, পলাশের মধ্যে তার সামান্য নিদর্শনও আমি কখনও পাইনি। সবসময় সে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে থাকত। এটা কোনো ছোটখাটো সমস্যা নয়। অতিরিক্ত তর্কবিতর্ক মুমিনের অন্তরকে মেরে ফেলে। আমার ধারণা ওর অন্তর নষ্ট হয়ে গেছিল। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাঃ প্রতি মহব্বত, আবেগ, শ্রদ্ধা যদি অন্তরে বেঁচে থাকত, এভাবে খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
| শেষ কথা |
নিছক স্মৃতিচারণা কিংবা পলাশ কত খারাপ ছিল সেটা জানানো এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি এমন একজন মুমিনকে কাছ থেকে দেখেছি, যে মুরতাদ হয়ে গেছে। আর কোনো মুমিনের সঙ্গে যেন এমন না ঘটে, সে উদ্দেশ্যেই এই লেখা। আমি চেষ্টা করেছি ওর সমস্যাগুলো আপনাদেরকে জানানো। লেখাটা পড়ার পর মনে হতে পারে আমি কেবল খারাপ দিকগুলোই বললাম। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে, মুর/তাদের গুণ বর্ণনা মুমিনের শান নয়। তাছাড়া তার গুণ জেনে আমাদের লাভ কী? বরং যে সম্ভাব্য কারণগুলো তাকে কুফরের গর্তে ফেলে দিয়েছে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
আমাদের অনেকের মধ্যেই কিন্তু পলাশের দোষগুলো কমবেশি রয়েছে। আমাদের অনেকেরই উস্তাদ নেই। আমাদের অনেকেরই ফরজ ইলম নেই, অথচ অনলাইনে অফলাইনে তর্কবিতর্ক করে সময় পার করি। আমরা অনেকেই আলিমদের শ্রদ্ধা করি না। মুমিনদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াই। অতএব এখনই আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। কে বলতে পারে আমাদের পা পিছলে যাবে না? কে বলতে পারে মহামূল্যবান ঈমান আমরা হারিয়ে ফেলব না? ঈমান আনা কঠিন। ঈমান টিকিয়ে রাখা আরও কঠিন। রাসূলুল্লাহর হাদীস স্মরণ রাখা উচিত, যেখানে বলা হচ্ছে শেষ যুগে ঈমান ধরে রাখা হাতে জ্বলন্ত কয়লা ধরে রাখার চেয়েও কঠিন হবে। (৩)
| তথ্যসূত্র |
১) আহমদ আল উবাইদুল্লাহর পূর্ব নাম পলাশ নয়। অনলাইনে প্রাইভেসির কারণে সে নিজের প্রকৃত পরিচয় দিত না। কারণ তার পরিবার থেকে সে ক্ষতির আশংকা করত। আমরাও তাই প্রকৃত নাম গোপন রাখছি।
২) তাযকিরাতুস সামি ওয়াল মুতাকাল্লিম, পৃষ্ঠা-৮৭
৩) তিরমিজি, ২২৬০
@Talibtimes2bn