১. সঠিক লোক খুঁজে বের করতে পারা আজকের যুগে একটা সারভাইভাল স্কিল। জেলের যেমন সাঁতার জানতে হয়, বুনো মধু আহরণকারীর যেমন গাছ বাওয়া জানতে হয়, ঠিক একই ভাবে বিদেশে হায়ারস্টাডি আর ক্যারিয়ার গড়া মানুষদের নেটওয়ার্কিং জানতে হয়। নিজের উপর কাজ করুন, কথার ধরণ, অ্যাপ্রোচ, এটিকেট এমন লেভেলে নিয়ে যান যাতে মানুষ আপনার সাথে কথা বলে ভরসা পায় আর আপনাকে হেল্প করতে চায়। আমেরিকায় দুইটা ইউনিভার্সিটিতে ৮ বছর শিক্ষকতা করা মামুনকে দূরের মানুষ চেনে, কিন্তু গ্রেকে আমার কলিগরা জানে আমি জাস্ট তাদের একজন খাদেম, আমার কাজ তাদের খেদমত করা যাতে তারা তাদের কাজগুলো ঠিক ভাবে করতে পারে। ইয়েস, এই “লিডারশিপ থ্রু সারভ্যান্টহুড” বিষয়টা ব্রেইনে ট্যাটু করে ফেলবেন। আপনার বিনয় আপনার ব্যক্তিত্বের শ্রেষ্ঠ সুরভি, এটাই রাইট পিপলকে আপনার দিকে আকৃষ্ট করবে।
২. লাইফ ইজ শর্ট, কাজেই অনেকগুলো রং মানুষের সাথে সময় নষ্ট না করে অল্প কিছু রাইট মানুষের সাথে লম্বা সময় সুসম্পর্ক রাখুন। ভুলে যান যে নেটওয়ার্কিং একটা সাময়ীক দরকারী বিষয়। ওহ এখন আমার চাকরি লাগবে, যাই ওই ভাইকে নক দেই, তারপর দরকার ফুরালে আবার লাপাত্তা — এই মেন্টালিটি পরিহার করুন। রাইট পিপল যাতে আপনাকে তাদের সার্কেলের অংশ মনে করে তাই যোগাযোগ রাখুন (আর অবশ্যই যোগ্যতা অর্জন করুন, কারণ পুরো পৃথিবী ল অব ম্যাগনেটিজম অনুসরণ করে)।
৩. ফেইসবুকে সস্তা বিনোদনগুলো কৌশলে এড়িয়ে চলুন। হাতে গোণা কয়েকটা গ্রুপ আর পেইজ অনুসরণ করবেন। বিনোদনের জন্য ডেডিকেটেড সময় রাখুন, উপভোগ করুন। আমি নেটফ্লিক্সে এক সপ্তাহে ব্রেকিংব্যাড টানা দেখে খতম করেছিলাম এক ভ্যাকেশনে, ক্যাম্পিং-এ গেলে টানা দুই তিন দিন নেটওয়ার্কের বাইরে থাকি, কয়েকদিন আগে মায়ামি থেকে বাহামায় গেলাম, পুরো চারদিন যাবতীয় ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, আমি এবং আমার স্ত্রী একটা বিজনেস টকও করি নাই, কারণ এটা আমাদের ভেতরের স্বত্ত্বার খোরাক। কিন্তু আপনি যদি আমার স্ক্যাজুল দেখেন, বুঝবেন আমি কী পরিমাণ ওয়ার্কোহলিক। বহু বছর ধরে আমি কাজ আর বিনোদনকে আলাদা জায়গায় রাখতে শিখেছি। চীপ রিক্রিয়েশন উইল কিল ইউ, ট্রাস্ট মি। কাজ করুন, সময় আর টাকা জমান, সেটা দিয়ে দামী কিছু বিনোদন কিনুন।
৪. ফেইসবুক থেকে বাঁচানো সময় বিনিয়োগ করুন লিংকডিনে। যারা রিসার্চে আসতে চান তারা রিসার্চগেইট আর গুগল স্কলার সাইটগুলোতে জোর করে বসে থাকুন। দেখবেন ফেইসবুকের মতো এই সাইটগুলোরও ডোপামিন দেবার ক্ষমতা আছে, যদি আপনি খালি প্যারাডাইমটা ঘুরিয়ে দেন। ওই যে বলেছিলাম না, ফেইসবুক কৌশলে ব্যবহার করবেন? মানে ফেইসবুকে কেবল একজনের অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির সংবাদটা পিক করবেন, তারপর বেরিয়ে এসে তাকে লিংকডিনে খুঁজে বের করে যোগাযোগ শুরু করবেন। একই ব্যক্তির কথার টোন ফেবু মেসেন্জার আর লিংকডিনে ভিন্ন রকম থাকে। পেশাদারিত্ব একটা আর্ট, বজায় রাখতে শিখুন।
৫. গুগল স্কলারে দেখবেন ডান পাশে কোল্যাবরেটরদের তালিকা থাকে, সেখান থেকে মানুষকে পিক করে লিংকডিনে খুঁজে বের করুন, তার কাজ ফলো করুন; দেখবেন আবার সেই একই ধরণের মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন। ছোট সার্কেল, বড় ইমপ্যাক্ট এবং সেখান থেকে আসলেই অনেক বড় হেল্প বের করে নিতে পারবেন।
৬. লিংকার ব্যবহার করুন। মানে, আপনার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কেউ যদি ওই ইউনি বা কোম্পানিতে থাকে, তবে তাহলে সেই অ্যালামনাই সুযোগটা ক্যাপিটালাইজ করুন। আমার স্ত্রী একজন ক্যাডেট, এবং ক্যাডেটরা ক্যাডেটদের জন্য কোন এক্সট্রীম লেভেলের হেল্প করে কাছ থেকে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। পিএইচডি সেকেন্ড ইয়ারে থাকা অবস্থায় আমাদের এক নতুন প্রফেসর জয়েন করলো, আমি ঠিক তার প্রেজেন্টেশনের চুম্বক অংশগুলো জড়ো করে ঢাকায় আমার বন্ধু আবিরকে বললাম তুই এভাবে ইমেইল কর; কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার ফান্ডিং হয়ে গেল। প্রফেসর সার্চিং যে কত পেইনফুল তা আবির টেরই পায়নি কারণ আমি তার লিংকার ছিলাম। ভুললে চলবে না, আপনার আজকের ক্লাসমেইট কিন্তু আগামি বছরে আপনার লিংকার হয়ে যেতে পারে। তাই, নেভার শৌ অ্যাটিচুড টু এনিওয়ান। লাইফ ইজ শর্ট, বি নাইস, স্টে নাইস।
৭. গ্রেক থেকে বাংলাদেশী প্রফেসর, পোস্ট ডক আর পিএইচডি স্টুডেন্ট দের একটা ডেটাবেইজ বানানো হয়েছিল গ্রেকডেটাবেজ ডট কম নামে (লিংক কমেন্টে দিচ্ছি); বাংলাদেশী একটা কোম্পানি অনেক ভুংভাং প্রতিশ্রুতি দিয়ে খুব বাজে ডিজাইনের একটা সাইট বানিয়েছে, কিন্তু তার পরেও এখানের ডেটাগুলো দেখতে পারেন। বিশ্বস্ত কোম্পানি পেলে আমি রিডিজাইন করাতে প্রস্তুত, কারণ আমি বিশ্বাস করি এটা হায়ারস্টাডি প্রত্যাশিদের মাস্ট কাজে আসবে।